কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় এবং লোন পেতে কী কী লাগে

কৃষি কাজের জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন? কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার উপায় জানেন না? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই।

কৃষি ব্যাংক থেকে কৃষকদের মাঝে ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। ফলে, যেসব কৃষক অর্থাভাবে ঠিকভাবে কৃষি কাজ করতে পারছেনা, তারা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার মাধ্যমে তাদের কৃষি কাজ ঠিকভাবে চালনা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষিখাতের অনেক ভালো ভূমিকা আছে, তাই কৃষি লোন দেয়া হয়।

আপনিও যদি কৃষি কাজের জন্য কৃষি লোন নিতে চান, তাহলে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করবো এই পোস্টে। তো চলুন, মূল বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পেতে কী কী লাগে

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পেতে নিম্নোক্ত কাগজপত্রগুলো লেগে থাকে। কৃষি কাজের জন্য লোন নিতে যদিও তেমন জামানতের প্রয়োজন হয়না। কারণ, কৃষি লোন অল্প পরিমাণে দেয়া হয়। তবে, বেশি পরিমাণে লোন নিতে চাইলে জামানত প্রয়োজন হতে পারে।

আপনি যদি কৃষি লোন নিতে চান, তাহলে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন। নিচে একটি বিস্তারিত তালিকা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

  • ভোটার আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • নমিনির সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • কৃষি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে
  • কতটুকু জমি আছে তা প্রমাণ করার জন্য জমির কাগজপত্র
  • লোনের জামিনদাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ছবি
  • জমির খাজনার প্রমাণপত্র
  • একটি সচল মোবাইল নাম্বার
  • ঠিকানা যাচাই করার জন ইউটিলিটি বিলের কপি
  • লোনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে জামানত লাগতে পারে

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে লোনের আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। লোনের আবেদন ফরম পূরণ করার পর ফরমের সাথে উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো একসাথে করে জমা দিতে হয়। নিচে লোনের আবেদন করার নিয়ম এবং শর্তাবলি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে।

কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যেতে হবে। আপনার নিকটস্থ যেকোনো শাখায় যাবেন। এরপর, সেখানে কর্মরত কাউকে জানাতে হবে যে আপনি কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান।

অতঃপর, তারা আপনার অ্যাকাউন্ট আছে কিনা জানতে চাইবে। যদি অ্যাকাউন্ট থাকে, অ্যাকাউন্ট এর নাম্বার দিবেন। যদি অ্যাকাউন্ট না থাকে, তবে নতুন অ্যাকাউন্ট করতে হবে। অতঃপর, তারা বেশ কিছু তথ্য জানতে চাইতে পারে।

আপনি কেন লোন নিতে চান, আপনি কৃষক কিনা, লোন নেয়ার পর কোন ফসল চাষ করবেন, কত টাকা লোন প্রয়োজন ইত্যাদি। এসব তথ্য তাদেরকে দেয়ার পর লোনের আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। পূরণ করে, উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো সঙ্গে জমা দিতে হবে।

লোনের আবেদন ফরম জমা দেয়ার পর তারা আপনার লোনের আবেদন যাচাই করে দেখবে। যদি আবেদন ঠিক থাকে এবং বাকি সবকিছু সঠিক হয়, তাহলে আপনাকে লোন দেয়া হবে। এভাবে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।

আগে রাজশাহী কৃষি ব্যাংক নামে একটি আলাদা কৃষি ব্যাংক ছিলো আমাদের দেশে। কিন্তু, বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। তাই, কৃষি লোন নিতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে।

এছাড়া, লোন পাওয়ার অন্যান্য উপায়, লোন পাওয়ার শর্তাবলি এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন —

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোন অ্যাপস

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোন অ্যাপস ব্যবহার করে অনলাইনে ঘরে বসে লোনের আবেদন করতে পারবেন। লোনের আবেদন করার জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে BKB Janala অ্যাপটি সার্চ করে ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। এরপর, অ্যাপে রেজিস্টার করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন আবেদন করতে পারবেন।

  • আপনার স্মার্টফোনে থেকে গুগল প্লে স্টোর ওপেন করুন। BKB Janala লিখে সার্চ করুন।
  • এরপর, অ্যাপটি ইনস্টল করুন। ইনস্টল করার পর অ্যাপটি ওপেন করুন।
  • এখন, ঋণ অপশনে ক্লিক করে কত মেয়াদের ঋণ নিতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে।
  • অতঃপর, কোন ধরনের ঋণ নিতে ইচ্ছুক তা সিলেক্ট করে লোনের আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।

এই পদ্ধতিতে BKB Janala অ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে লোনের আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের কপি সংগ্রহ করে প্রিন্ট করে নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক যেতে হবে। এরপর, বাকী কাজগুলো সম্পন্ন করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

এরপর, অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে আপনার লোনের আবেদন অনুমোদন করা হলে খুব সহজেই কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। এভাবে, ঘরে বসে অনলাইনে কৃষি ব্যাংক লোন আবেদন করতে পারবেন।

কৃষি ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট

পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লোন ইন্টারেস্ট রেট ছিলো ৯% । যা বর্তমানে কমিয়ে ৮% করা হয়েছে। তাই, যারা কৃষি ব্যাংক থেকে কৃষি লোন নিতে চাচ্ছেন, তাদেরকে ৮% ইন্টারেস্ট রেটে লোনের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

অর্থাৎ, আপনি যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১,০০,০০০ টাকার কৃষি লোন নেন। তবে, ৮% ইন্টারেস্ট রেট সহ মোট ১,০৮,০০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য ব্যাংকের মতো ৯% ইন্টারেস্ট রেট থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশনামতে কমিয়ে ৮% করা হয়েছিলো।

কৃষি ব্যাংক থেকে কী কী খাতে লোন গ্রহণ করা যায়

কৃষি ব্যাংক থেকে কী কী খাতে লোন নেয়া যায় তা অনেকেই জানতে চান। কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে কৃষি বিষয়ক খাতের উপর লোন নিতে হবে। যেসব খাতের উপর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন দেয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে –

  1. শস্য ঋণ
  2. মৎস্য ঋণ
  3. লাইভ স্টক ঋণ
  4. কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি ঋণ

আপনার যদি কৃষি কাজ সম্পর্কিত লোনের প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। উপরে কৃষি ব্যাংকের লোন খাতগুলো উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

কৃষি ব্যাংক কি সরকারি?

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক। এর অর্থ হল, এই ব্যাংকের সকল শেয়ার বাংলাদেশ সরকারের কাছে রয়েছে। এই ব্যাংককে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল দেশের কৃষক ও কৃষি খাতকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে।

কৃষি ব্যাংক কৃষকদের কম সুদে ঋণ দেয়, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সহযোগিতা করে এবং কৃষি উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে। সরকারি হওয়ার কারণে এই ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হল দেশের কৃষি খাতকে উন্নত করা এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন করা।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার শর্তাবলী

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার একটি শর্ত হচ্ছে আপনাকে কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকতে হবে। কৃষি কাজের সাথে জড়িত কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবে। লোন নেয়ার জন্য আরও কিছু শর্তাবলি আছে। নিচে এগুলো উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

  • ঋণ গ্রহণের জন্য একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা কারণ উল্লেখ করতে হবে।
  • কৃষকরা লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। প্রত্যেক লোন গ্রহীতাকে একটি ক্রেডিট পাসবুক দেওয়া হবে।
  • প্রতি বছর নেওয়া মোট ঋণের ৬০% অংশ শস্যের বিপরীতে নির্ধারিত করা হবে।
  • যেকোনো ফসলের জন্য ঋণ গ্রহণ করেন না কেন, এই ঋণ সকল ফসলের আওতাভুক্ত করা হবে
  • এই ঋণের সুদের হার ৯% নির্ধারিত করা হয়েছে।
  • এই ঋণ বার্ষিক ভিত্তিতে মঞ্জুর করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য এই শর্তাবলিগুলো মানতে হবে। তাহলে, ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে অথবা কৃষি ব্যাংক গিয়ে আবেদন করার মাধ্যমে কৃষি লোন নিতে পারবেন সহজেই।

আরও পড়ুন —

কৃষি ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুযোগ এবং সুবিধা রয়েছে অনেক। কৃষকরা তেমন জামানত ছাড়াই কৃষি ব্যাংক থেকে তাদের কৃষি কাজের প্রয়োজনে লোন নিতে পারবে। লোন নেয়ার জন্য জামানত লাগেনা জন্য অনেক কৃষক তাদের কৃষি কাজের অর্থায়ন করতে এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। নিচে এগুলো তালিকা আকারে শেয়ার করা হলো –

  • কৃষি ব্যাংক থেকে কৃষকরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য লোন নিতে পারবেন।
  • কৃষি ব্যাংক শস্য চাষের জন্য কৃষকদের লোন সুবিধা প্রদান করে।
  • কৃষির বিভিন্ন খাত যেমন ফসল চাষ, মাছ চাষ, প্রাণিসম্পদ পালন ইত্যাদিতে কৃষকরা স্বল্প সুদে লোন নিতে পারবেন।
  • মাছ চাষের সাথে জড়িত কৃষকরা কৃষি ব্যাংক থেকে মাছ চাষের জন্য লোন নিতে পারবেন।
  • গবাদি পশু পালন, মুরগি পালন ইত্যাদি প্রাণিসম্পদ খাতে কৃষকরা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।

কৃষি ব্যাংক থেকে ৮% ইন্টারেস্ট রেটে লোন দেয়া হয়। ফলে, অন্যান্য ব্যাংক থেকে লোন দেয়া হয় জন্য কৃষকরা এই ব্যাংক থেকে সহজেই লোন নিতে পারেন। লোন নেয়ার জন্য আলাদা করে জামানতের প্রয়োজন পড়েনা।

কৃষি ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়

কৃষি ব্যাংক থেকে আপনার কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজন অনুসারে লোন নিতে পারবেন। আপনার কৃষি কাজের পরিধি, জমির পরিমাণ এবং অন্যন্য বিষয় যাচাই করে তারা বিভিন্ন পরিমাণ লোন দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদী ঋণ, মধ্যমমেয়াদী ঋণ এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিতে পারবেন। এই তিন ধরণের ঋণের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে।

আপনার যদি অল্প পরিমাণ টাকার ঋণ প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বল্পমেয়াদী ঋণ নিতে পারেন। এছাড়া, মধ্যমমেয়াদী ঋণও নিতে পারবেন। বেশি মেয়াদী ঋণ প্রয়োজন হলে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিতে পারেন।

শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়, কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পেতে কী কী লাগে এবং কৃষি ব্যাংক লোন সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। যারা কৃষি কাজ করেন এবং অর্থের প্রয়োজন ঋণ নিতে চাচ্ছেন, তারা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন স্বল্প ইন্টারেস্ট রেটে।

এছাড়া, আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্ট চেক করার নিয়ম, একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং ব্যাংকিং সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকিং, ব্যাংক লোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য জানতে ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ রইলো।

Leave a Comment