সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান? কিন্তু সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জানেন না? সিটি ব্যাংক একাউন্টের সুবিধা ও অসুবিধা এবং একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে।
সিটি ব্যাংক আমাদের দেশের জনপ্রিয় ব্যাংকগুলোর মাঝে একটি। সিটি ব্যাংকের সেবার মান উন্নত হওয়ার কারণে অনেকেই নতুন করে সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন। কিন্তু, সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনেকেই জানেন না। এছাড়াও, সিটি ব্যাংকে কত ধরনের হিসাব খোলা যায়, কী কী সুবিধা এবং অসুবিধা এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এই পোস্টে।
তো চলুন, সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খোলার পদ্ধতি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।
Table of Contents
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, ইউটিলিটি বিলের কপি, নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও একাউন্ট খুলতে ন্যুনতম জমার পরিমাণ টাকা নিয়ে যেতে হবে। এরপর, এসব কাগজপত্র দিয়ে সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারবেন।
সিটি ব্যাংকে কয়েক ধরনের একাউন্ট খোলা যায়। সেভিংস একাউন্ট, স্টুডেন্ট একাউন্ট, কারেন্ট একাউন্ট সহ আরও অনেক ধরনের হিসাব খোলা যায় সিটি ব্যাংকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সিটি ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে পারবেন।
সিটি ব্যাংকে হিসাব খুলতে চাইলে অবশ্যই উপরে উল্লেখ করে দেয়া ডকুমেন্টগুলো নিয়ে যেতে হবে। এরপর, ব্যাংকে থাকা কর্মকর্তাকে বলে সকল কাগজপত্র দেয়ার মাধ্যমে সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারবেন অনেক সহজেই।
আরও পড়ুন —
- অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
- সোনালী ব্যাংক একাউন্ট খোলার সহজ নিয়ম
- সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কী কী লাগে
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র এবং তথ্য লাগে। সিটি ব্যাংকে যেকোনো ধরণের একাউন্ট খুলতে কী কী কাগজপত্র লাগে তার একটি বিস্তারিত তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- সচল একটি মোবাইল নাম্বার যেটিতে একাউন্ট খুলতে চান
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশনের জন্য ইউটিলিটি বিলের কপি
- নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- নমিনির সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি
- ইনকাম সোর্স এর প্রমাণপত্র
- ব্যবসায়ী হলে ব্যবসায়ের ট্রেডিং লাইসেন্স এর কপি
- ব্যাংক হিসাব খুলতে হিসাবভেদে একাউন্ট খোলার চার্জ (ব্লক মানি)
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে সব ধরনের একাউন্ট খোলার সময় উপরে উল্লেখ করে দেয়া ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে। সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যেসব ডকুমেন্ট লাগে এগুলো নিয়ে সিটি ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে গিয়ে অনেক সহজেই একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন।
আরও পড়ুন — ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সহজেই সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সহজেই সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে যেতে হবে। এরপর, সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যেসব ডকুমেন্ট লাগে সেগুলো দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এরপর, আবেদন করার মাধ্যমে অনেক সহজেই সিটি ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলতে পারবেন।
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে নিচে উল্লিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
ধাপ ১ – সিটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চে যোগাযোগ
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করতে হবে। ব্রাঞ্চে গিয়ে তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে চান। কী ধরনের হিসাব খুলতে চান সেটি জানতে চাইবে। আপনি যদি সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে চান, তাহলে স্টুডেন্ট একাউন্টের কথা বলবেন।
এছাড়া, সেভিংস একাউন্ট এবং কারেন্ট একাউন্ট খুলতে চাইলে সেগুলোর কথা বলতে পারেন। অতঃপর, তারা সে অনুযায়ী ব্যাংক একাউন্ট খোলার আবেদন ফরম নিয়ে আসবে।
আরও পড়ুন — ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম
ধাপ ২ – প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রদান করা
সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খোলার আবেদন ফরম সকল তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। নাম, পিতা-মাতার নাম, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ডেবিট কার্ড নিতে চান নাকি চেকবই নিতে চান, ইনকাম সোর্সের প্রমাণপত্র ইত্যাদি লিখতে হবে ফরমে।
ধাপ ৩ – প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করা
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে সেগুলো আবেদন ফরম পূরণ করার পর আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে। আবেদন ফরমের সাথে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নমিনির আইডি কার্ডের কপি, ছবি এবং ইউটিলিটি বিলের কপি জমা দিতে হবে। এছাড়া, যেসব ডকুমেন্ট চাওয়া হবে, সেসব জমা দিতে হবে।
এরপর, উক্ত আবেদন ফরমটি দিয়ে তারা অনলাইনে আবেদন করবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার দিনই আপনার থেকে KYC নিতে পারে। যদি KYC না নেয়, তাহলে আপনার ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে পরবর্তী যেকোনো একদিন ব্রাঞ্চে গিয়ে KYC দিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন — বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কী কী
ধাপ ৪ – একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন সফল হওয়ার অপেক্ষা
সকল তথ্য এবং কাগজপত্র প্রদান করার পর, আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে যদি একাউন্ট সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন কোনো ম্যাসেজ আসে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার সিটি ব্যাংক একাউন্ট সফলভাবে তৈরি হয়ে গেছে।
এই ম্যাসেজে আপনার ব্যাংক একাউন্টের নাম্বার জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর, আপনি চাইলে উক্ত ব্যাংক একাউন্টটি সিটি ব্যাংকের Citytouch অ্যাপ ব্যবহার করে লিংক করে লেনদেন করতে পারবেন। এছাড়া, আপনার নাম্বার দিয়ে সিটি ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপে লগইন করে ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে পারবেন।
উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন যেকোনো ব্রাঞ্চ থেকে। আপনার এলাকার সিটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চে গিয়ে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসরণ করে ব্যাংক একাউন্ট হিসাব খোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে চাইলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড এবং ইনকাম সোর্স এর প্রমাণ লাগবে। এছাড়া, ব্যবসায়ী হলে ব্যবসায়ের ট্রেডিং লাইসেন্স এর কপি জমা দিতে হবে। এছাড়াও, প্রায় প্রতিটি ব্যাংক হিসাব খুলতেই ইনকাম সোর্স এর প্রমাণ জমা দিতে হয়।
সিটি ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কী কী
সিটি ব্যাংক একাউন্ট মোট ০৩ প্রকার। এগুলো হচ্ছে –
- স্টুডেন্ট একাউন্ট
- সেভিংস একাউন্ট
- কারেন্ট একাউন্ট
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সিটি ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলতে চাইলে উপরে উল্লেখ করে দেয়া মোট ০৩ ধরনের একাউন্ট খুলতে পারবেন। এই তিন ধরনের প্রতিটি একাউন্ট খোলার চার্জ ভিন্ন হয়ে থাকে। সিটি ব্যাংকে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় যে টাকা দিতে হয়, সেটি ব্লক মানি হিসেবে থাকে। একাউন্ট ক্লোজ করে দিলে আবারও সেই টাকা ফেরত দেয়া হয়।
সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ
সিটি ব্যাংকের স্টুডেন্ট একাউন্ট শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টে যেকোনো প্রকার চার্জ একদম ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। টাকা জমা এবং উত্তোলন সম্পূর্ণ ফ্রি, এসএমএস চার্জ ফ্রি, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং করার সুবিধা এবং ফ্রিতে ডেবিট কার্ড দেয়া হয়।
এছাড়া, সঞ্চয় করতে চাইলে সিটি ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারেন। সেভিংস করার পর প্রতি মাসে শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মুনাফা হিসেবে পাবেন। এছাড়াও, সেভিংস একাউন্টে টাকা থাকে সুরক্ষিত। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং সহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় সিটি ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের ক্ষেত্রে।
সিটি ব্যাংকে হিসাব খুললে ডেবিট কার্ড অথবা চেক দেয়া হয়। ডেবিট কার্ড দিয়ে ব্যাংকে থাকা ব্যালেন্স দিয়ে দেশের ভিতরে যেকোনো জায়গায় পেমেন্ট করা, পে বিল করা সহ এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায় সহজেই। এছাড়া, পাসপোর্ট এন্ডোর্স করার মাধ্যমে বাইরের দেশের কারেন্সি ব্যবহার করেও যেকোনো জায়গায় পেমেন্ট করা যায়।
সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খোলার পর আপনি চাইলে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করে ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে, এর জন্য সিটি ব্যাংকের দেয়া শর্ত অবশ্যই মানতে হবে।
শেষ কথা
আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, সিটি ব্যাংকে কত ধরনের একাউন্ট আছে, সিটি ব্যাংকের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছি আপনাদের সাথে। সিটি ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলতে চাইলে উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে অনেক সহজেই একটি একাউন্ট খুলতে পারবেন।