বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংক অনেক বেশি। বেসরকারি ব্যাংক কয়টি ও কী কী এসব বিষয় নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে অনেকগুলো। ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক সহ আরও অনেক ব্যাংক আছে আমাদের দেশে। বাংলাদেশে মোট কতটি বেসরকারি ব্যাংক আছে, এসব ব্যাংকের নাম এবং উক্ত ব্যাংকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
তো চলুন, বাংলাদেশে মোট বেসরকারি ব্যাংক কয়টি ও কী কী এবং এসব ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।
Table of Contents
বাংলাদেশে মোট বেসরকারি ব্যাংক কয়টি
বাংলাদেশে মোট বেসরকারি ব্যাংক আছে ৪৩টি। তালিকাভুক্ত মোট বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিমাণ ৪৩টি। এছাড়া, অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক আছে আমাদের দেশে মোট ৫টি। এছাড়া, ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪টি বিশেষায়িত ব্যাংক, একটি ডিজিটাল ব্যাংক এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক আছে আমাদের দেশে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের দেশে বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংক আছে যেগুলো বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বর্তমানে শক্তিশালী পর্যায়ে অবস্থান করছে।
এছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের রেমিটেন্স এর ধারা অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স আসে সবথেকে বেশি পরিমাণে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো কী কী
বাংলাদেশে মোট ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংক আছে। এই ব্যাংকগুলোর একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যারা বাংলাদেশের অবস্থানরত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নাম জানতে ইচ্ছুক, তারা নিম্নোক্ত তালিকাটি দেখতে পারেন।
এখানে, ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৩৩ ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১০টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর তালিকা নিচে সংযুক্ত করে দেয়া হলো –
নিম্নোক্ত তালিকায় থাকা ৩৩টি বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
- পূবালী ব্যাংক পিএলসি
- উত্তরা ব্যাংক পিএলসি
- এবি ব্যাংক পিএলসি
- আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি
- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি
- সিটি ব্যাংক পিএলসি
- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড
- এনসিসি ব্যাংক পিএলসি
- ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি
- ঢাকা ব্যাংক পিএলসি
- প্রাইম ব্যাংক পিএলসি
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি
- সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড
- ওয়ান ব্যাংক পিএলসি
- ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি
- ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি
- ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি
- যমুনা ব্যাংক পিএলসি
- এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি
- এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড
- পদ্মা ব্যাংক পিএলসি (এক্সিম ব্যাংকের সাথে একীভূত)
- মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড
- মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড
- মেঘনা ব্যাংক পিএলসি
- এসবিএসি ব্যাংক পিএলসি
- সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি
- কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি
- সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি
নিম্নোক্ত তালিকায় থাকা ১০টি বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
- আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড
- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
- এক্সিম ব্যাংক (বাংলাদেশ)
- ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি
- শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
- ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
বাংলাদেশের ব্যাংক কয়টি ও কি কি?
বাংলাদেশে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে ৬টি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে ৪৩টি, ডিজিটাল ব্যাংক ১টি, বিদেশি ব্যাংক ৯টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৪টি সহ মোট ব্যাংক আছে ৬৩টি। এছাড়া, অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা হচ্ছে ৫টি। এছাড়া, আমাদের দেশে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে।
অর্থাৎ, বাংলাদেশে মোট ৬৮টি ব্যাংক আছে। এগুলোর মাঝে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা হচ্ছে ৬২টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো হচ্ছে –
- রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যই ব্যাংক – ৬টি
- বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক – ৪৩টি
- ডিজিটাল ব্যাংক – ১টি
- বিশেষায়িত ব্যাংক – ৪টি
- বিদেশি ব্যাংক – ৯টি
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তালিকা ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক এবং সরকারি মালিকানাধীন বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক হলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের মাধ্যমে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এই ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সমস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখে এবং তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের মুদ্রানীতি নির্ধারণ করে, অর্থাৎ কত টাকা মুদ্রায় মুদ্রিত হবে, সুদের হার কত হবে ইত্যাদি সবই বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে। এছাড়া, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকই সংরক্ষণ করে। যখন আমরা বিদেশি মুদ্রায় কোনো কিছু কিনি বা বিক্রি করি, তখন এই রিজার্ভ ব্যবহার করা হয়।
আমরা যে টাকা ব্যবহার করি, তার বেশিরভাগই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রিত করে। এক টাকা, দুই টাকা এবং পাঁচ টাকার নোট ছাড়া অন্য সব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকই মুদ্রণ করে। এছাড়া, সরকারের কোষাগারের দায়িত্বও বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর ন্যস্ত। অর্থাৎ, সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা এবং সরকারের পক্ষ থেকে টাকা পরিশোধ করাও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ।
আরও পড়ুন —
সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাংলাদেশে মোট ৬টি সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে। এগুলো হচ্ছে –
- সোনালী ব্যাংক পিএলসি
- জনতা ব্যাংক পিএলসি
- অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি
- রূপালী ব্যাংক পিএলসি
- বেসিক ব্যাংক পিএলসি
- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (সোনালী বাংকের সাথে একীভূত)
ডিজিটাল ব্যাংক
বাংলাদেশে একটি মাত্র ডিজিটাল ব্যাংক আছে। এটি হচ্ছে –
- নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি
বিশেষায়িত ব্যাংক
বাংলাদেশে মোট ৪টি বিশেষায়িত ব্যাংক আছে। এগুলো হচ্ছে –
- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি বাংকের সাথে একীভূত)
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
- কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
বিদেশি ব্যাংক
বাংলাদেশে মোট ৯টি বিদেশি ব্যাংক আছে। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে –
- সিটিব্যাংক এনএ
- এইচএসবিসি
- উরি ব্যাংক
- কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন
- হাবিব ব্যাংক লিমিটেড
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ
- ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান
- ভারতীয় স্টেট ব্যাংক
- ব্যাংক আলফালাহ্
অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক
আমাদের দেশে মোট ৫টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক আছে। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে –
- জুবিলী ব্যাংক
- গ্রামীণ ব্যাংক
- আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক
- কর্মসংস্থান ব্যাংক
- পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনটি?
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একটি যৌথ মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকটি দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। ব্যাংকটির মোট শেয়ারের প্রায় ৩৭% স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের এবং বাকি ৬৩% বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৬২৩টি শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি গ্রাহকদের ব্যাপক পরিসেবা প্রদান করে আসছে। শাখার বিস্তৃতি এবং গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে এই ব্যাংকটি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
শেষ কথা
বেসরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি, সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি এবং বাংলাদেশের মোট ব্যাংক কয়টি ও কি কি এসব তথ্য এই পোস্টে শেয়ার করা হয়েছে। বাংলাদেশের মোট ব্যাংকের সংখ্যা, তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা জানতে পারবেন এই পোস্টে।
এছাড়া, আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্ট চেক করার নিয়ম, একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং ব্যাংকিং সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকিং, ব্যাংক লোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য জানতে ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ রইলো।