আমাদের বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি দুই ধরনের ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি এবং এসব সরকারি ব্যাংকের নাম কী কী তা নিয়ে আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
একটি দেশে সরকারি এবং বেসরকারি মালিকানাধীন দুই ধরনের ব্যাংক থাকে। সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মূলত রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করে থাকে এসব ব্যাংক। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক রয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কী কী তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
Table of Contents
বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ০৯টি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক রয়েছে। এসব সরকারি ব্যাংক দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর নাম এবং এগুলোর তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকা
- বাংলাদেশ ব্যাংক (কেন্দ্রীয় ব্যাংক)
- অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
- জনতা ব্যাংক লিমিটেড
- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
- রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
- বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড
বাংলাদেশে মোট ০৯টি সরকারি ব্যাংক রয়েছে। এসব সরকারি ব্যাংকের নামের একটি তালিকা উপরে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। দেশে অবস্থিত এই ০৯টি ব্যাংক দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে থাকে।
প্রতিটি ব্যাংকের আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য রয়েছে। নিচে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে, প্রতিটি ব্যাংকের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আরও পড়ুন —
বাংলাদেশ ব্যাংক (কেন্দ্রীয় ব্যাংক)
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, মুদ্রা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান, এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা লেনদেন পরিচালনা করা এই ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করে, এরপর ঢাকায় অবস্থিত স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক রাখা হয়। এরপর থেকে এই ব্যাংকই আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য একটি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়ে, ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হল অগ্রাণী ব্যাংক লিমিটেড। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, গ্রামীণ উন্নয়ন, এবং ব্যক্তিগত আর্থিক সেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
১৯৭২ সালের ২৭শে মার্চ মাত্র ৫ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন ও ১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। ২০০৭ সালের ১৭ই মে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।
জনতা ব্যাংক লিমিটেড
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী জনতা ব্যাংক লিমিটেড দেশের সবচেয়ে পুরোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জনতা ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক।
দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখাই জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর প্রধান লক্ষ্য। কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র ঋণ, গৃহস্থালীর ঋণ, ব্যবসায়িক ঋণ সহ বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রদান করে থাকে এই ব্যাংক।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড (এসবিপিএলসি) বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক (ন্যাশনালাইজেশন) অর্ডার ১৯৭২ অনুসারে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৬০০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৪১৩০ কোটি টাকা।
ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখাই ব্যাংকটির প্রধান লক্ষ্য। কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত আর্থিক সেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বর্তমানে ১২৩১ টি শাখা রয়েছে, যার মধ্যে ১২২৯ টি দেশের অভ্যন্তরে এবং ২ টি বিদেশে অবস্থিত। দেশের অভ্যন্তরে ৭৩০ টি শাখা গ্রামাঞ্চলে এবং ৫০০ টি শহরাঞ্চলে অবস্থিত।
রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রূপালী ব্যাংক লিমিটেড একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের সকল স্তরের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, গ্রামীণ উন্নয়ন, এবং ব্যক্তিগত আর্থিক সেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করে। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এবং এটিএম পরিষেবা সহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের সুবিধা প্রদান করে।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষ আর্থিক সেবা প্রদান করে থাকে রুপালি ব্যাংক লিমিটেড। সারা দেশে ৫০০ টিরও বেশি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছে।
রূপালী ব্যাংক লিমিটেড দীর্ঘ ৩৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে ব্যাংকটি তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বাকব) কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিই এর প্রধান লক্ষ্য। সারা দেশে ১২০০ টিরও বেশি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এবং এটিএম পরিষেবা সহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের সুবিধা প্রদান করে। কৃষি প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ, এবং ফসল বীমা সহ কৃষি-সম্পর্কিত সেবা প্রদান করে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দীর্ঘ ৪৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা দেশের শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে অবদান রাখে। এই ব্যাংক শিল্প ঋণ, উন্নয়ন ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঋণ, এবং আরও অনেক ধরণের ঋণ প্রদান করে।
এছাড়াও, বিডিবি আমানত সংগ্রহ, বিদেশী মুদ্রা লেনদেন, এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়তা প্রদান করে। ব্যাংকটি দেশব্যাপী শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তার সেবা প্রদান করে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এর উপস্থিতি রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক যা ইসলামী শরিয়াহ্ নীতির উপর ভিত্তি করে আর্থিক সেবা প্রদান করে।
আরও পড়ুন — ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর কিছু সেবার তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে —
- আমানত: সঞ্চয়ী হিসাব, মুদারবাহা হিসাব, টি-এসআর হিসাব ইত্যাদি।
- ঋণ: শরীয়াহ্-ভিত্তিক বিভিন্ন ধরণের ঋণ, যেমন মুরাবাহা, ইজারা, ওয়াকালাহ ইত্যাদি।
- ইনভেস্টমেন্ট: শরীয়াহ্-সম্মত বিনিয়োগ পণ্য, যেমন শুকুক, ইসলামী মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি।
- অন্যান্য সেবা: মনিট্রান্সফার, আন্তর্জাতিক লেনদেন, এলসি, গ্যারান্টি ইত্যাদি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড রিবা-মুক্ত অর্থনীতির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (BDBL) ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক যা বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শেষ কথা
আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে বাংলাদেশে সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কী কী তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাংলাদেশে মোট সরকারি ব্যাংক কয়টি এবং এসব সরকারি ব্যাংকের নাম ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে।
ব্যাংকিং, ব্যাংক লোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে যেকোনো সমস্যার সমাধান জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।