কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন? কিন্তু কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি এবং কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে কী কী লাগে এসব বিষয় বিস্তারিত শেয়ার করা হয়েছে এই পোস্টে। যারা কর্মসংস্থান করার জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এই লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চাকরির বাজারে অনেক যুবক-যুবতি চাকরি পাচ্ছেনা। একারণে আমাদের দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশের বেকারত্বের হার কমানোর উদ্দেশ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তো চলুন, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে কিভাবে লোন নিতে হয়, লোন নিতে কী কী লাগে এবং এই ব্যাংকের লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।
Table of Contents
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন নিতে কী কী লাগে
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে কিছু শর্ত মানতে হবে। এই ব্যাংক লোনের কিছু শর্ত আছে যা মানলে আপনিও লোন নিতে পারবেন এবং আপনার কর্মসংস্থান করার জন্য উক্ত লোনের টাকা ব্যবহার করতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন নিতে চাইলে কী কী শর্ত মানতে হবে বা কোন বিষয়গুলো জানতে হবে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
- লোনের আবেদনকারীর বয়স ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে হবে।
- আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারী কর্মসংস্থান ব্যাংকের যে শাখায় লোনের আবেদন করবে, সে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- লোনের একজন গ্যারেন্টার থাকতে হবে যিনি আবেদনকারী লোন পরিশোধে অক্ষম হলে লোন পরিশোধ করতে পারবেন।
- কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপি করা যাবে না।
- আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যুনতম পঞ্চম শ্রেণি পাশ হতে হবে।
- লোনের আবেদনকারীকে অবশ্যই বেকার বা অর্ধেক বেকার হতে হবে।
- লোন আবেদন করার সময় ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ০২ কপি রঙিন ছবি জমা দিতে হবে।
- কর্মসংস্থান ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট না থাকলে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার থাকতে হবে যেটিতে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বেকার বা অর্ধেক বেকার এমন মানুষদের লোন দেয়া হয়। যারা কর্মসংস্থান করতে পারছেন না, তাদের জন্য এই লোন। এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে আপনাকে বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে যা ইতোমধ্যে উপরোক্ত তালিকা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
উপরোক্ত শর্তগুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে উক্ত ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন এবং আপনার কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসা শুরু করতে পারবেন বা উদ্যোগ নিতে পারবেন।
এছাড়া, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সরকারি কোনো ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ট্রেনিং ইন্সটিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিটাক, টিটিসি ইত্যাদি যেকোনো একটি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর উক্ত ট্রেনিং এর সার্টিফিকেট দিয়ে লোনের আবেদন করতে পারবেন।
লোন নেয়ার সময় গ্যারান্টর রাখতে হয়। তাই, লোন নিতে চাইলে ব্যাংক থেকে একজন গ্যারান্টর রাখতে বলবে। একই এলাকায় বাস করে এমন একজন গ্যারান্টার বা আপনার পরিচিত কাউকে গ্যারান্টার বানাতে পারেন। তবে, উক্ত ব্যক্তির অবশ্যই আপনার অক্ষমতার কারণে লোন পরিশোধ করতে সক্ষম হতে হবে।
আরও পড়ুন —
- সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
- বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
- সোনালী ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
- ইসলামী ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিভিন্ন খাতে লোন দেয়া হয়। আপনি যদি বেকার হয়ে থাকেন এবং কোনো বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন কিন্তু উদ্যোগ নিতে পারছেন না বা ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না টাকার অভাবে, তাহলে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
অনেকেই বিভিন্ন খাতে উদ্যোগ নিতে চান। তাই, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিভিন্ন খাতে লোন দেয়া হয়। নিচে কর্মসংস্থান ব্যাংকের লোনের খাতসমূহ উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
- বাণিজ্যিক খাত
- যানবাহন ও পরিবহন
- সেবা খাত
- প্রাণি সম্পদ
- ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
- শিল্প কারখানা
- মৎস সম্পদ
- অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রকল্প
আপনি যদি উপরোক্ত এই খাতগুলোর যেকোনো একটি বা একের অধিক এর উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, এবং উদ্যোগ নেয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন। কর্মসংস্থান ব্যাংক এই সেক্টরগুলো সহ বিভিন্ন উৎপাদনশীল প্রকল্পের জন্য লোন দিয়ে থাকে।
তাই, কর্মসংস্থানের জন্য লোন নিতে চাইলে এসব প্রকল্পের যেকোনো একটির উপর নিতে পারবেন। লোন নিতে চাইলে অবশ্যই আপনার প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। যদি সার্টিফিকেট না থাকে বা প্রশিক্ষণ না নিয়ে থাকেন, তাহলে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিটাক, টিটিসি ইত্যাদি যেকোনো একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
এরপর, কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে লোন নিতে পারবেন। এরপর, উক্ত লোনের টাকা দিয়ে উদ্যোগ নিয়ে নিজেকে সফল করার পাশাপাশি আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য আপনাকে তাদের লোন খাতের যেকোনো একটি প্রকল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। বাণিজ্যিক খাত, যানবাহন ও পরিবহন, সেবা খাত ও প্রাণি সম্পদ খাত সহ আরও অনেক খাত আছে যেখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। অতঃপর, সার্টিফিকেট এবং লোন নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর, কর্মসংস্থান ব্যাংকে যোগাযোগ করে লোনের ফরম পূরণ করে লোন নিতে পারবেন।
এই ব্যাংক থেকে বেকার এবং অর্ধ বেকারদের লোন দেয়া হয়। তাই, আপনি যদি বেকার হয়ে থাকেন এবং কর্মসংস্থান এর জন্য লোনের প্রয়োজন হয়, তাহলে এই ব্যাংক থেকে তাদের লোনের শর্তগুলো মানার মাধ্যমে লোন নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন —
করমসংস্থান ব্যাংকে লোনের আবেদন করার নিয়ম
কর্মসংস্থান ব্যাংকে লোনের আবেদন করার জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন। তাহলে, আপনার প্রকল্প শুরু করতে এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
ধাপ ১ – প্রথমেই কর্মসংস্থান ব্যাংকের আপনার এলাকায় যে শাখা আছে, সেখানে যেতে হবে। এরপর, সেখানে কর্মরত কাউকে জানাতে হবে যে আপনি এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে ইচ্ছুক।
এরপর, তারা আপনার থেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে চাইবে। কেন লোন নিতে চান, লোন নিয়ে কোন প্রকল্পে কাজ করবেন, উক্ত প্রকল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কিনা সহ আরও অনেক তথ্য জেনে নিবে। এরপর, আপনাকে একটি লোনের ফরম দেয়া হবে।
ধাপ ২ – তাদের থেকে লোনের ফরমটি নেয়ার পর আপনার সকল তথ্য দিয়ে লোনের ফরমটি পূরণ করবেন। লোনের ফরম পূরণ করার পর, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি, লোনের গ্যারান্টার এর ছবি, এনআইডি কার্ডের ফটোকপি, আপনার স্বাক্ষর এবং গ্যারান্টার এর স্বাক্ষর সহ লোনের ফরম জমা দিতে হবে।
এছাড়া, আরও প্রয়োজনীয় যেসব তথ্য বা ডকুমেন্ট চাওয়া হবে, সেগুলো জমা দিতে হবে। অতঃপর, অপেক্ষা করতে হবে।
ধাপ ৩ – লোনের আবেদন করার পর ১ মাসের মত সময় লেগে থাকে লোন আবেদন অনুমোদন হতে। এই সময় অপেক্ষা করতে হবে। যদি লোনের আবেদন অনুমোদন হয়, তাহলে ব্যাংকে গিয়ে আপনার লোনের টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে পারবেন।
শেষ কথা
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যারা বেকার আছেন এবং উদ্যোগ নিতে চাচ্ছেন কিন্তু বিনিয়োগ করতে পারছেন না। তারা কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি লোন নিতে পারেন।
এরপর, লোনের টাকা দিয়ে উদ্যোগ নিতে পারবেন এবং প্রকল্প সফল করার মাধ্যমে আপনার বেকারত্ব ঘুচাতে পারবেন। পাশাপাশি, অন্যদের কাজের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদেরও কর্মসংস্থান করে দিতে পারবেন।
এছাড়া, আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্ট চেক করার নিয়ম, একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং ব্যাংকিং সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকিং, ব্যাংক লোন এবং মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য জানতে ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ রইলো।