ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট করতে চাচ্ছেন কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম জানেন না? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। ইসলামী ব্যাংকে কীভাবে একটি একাউন্ট খুলবেন সেটাই জানতে পারবেন এখানে।
লেনদেন করার জন্য কিংবা টাকা সঞ্চয় করার জন্য সবথেকে উত্তম একটি মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। আমাদের সকলেরই বিভিন্ন কাজে একটি ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজন পড়ে থাকে। যারা সুদ থেকে দূরে থাকতে চান, তারা সাধারণত ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট করতে চান। বাংলাদেশে বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংক আছে।
তবে, আজ আমি শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি তে কীভাবে একটি একাউন্ট করতে হয় এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
Table of Contents
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগে থাকে। একাউন্টের ধরণ অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে ১০০ টাকা, সেভিংস একাউন্ট খুলতে ৫০০ টাকা এবং কারেন্ট একাউন্ট খুলতে ১০০০ টাকা লেগে থাকে। ইসলামী ব্যাংকে এই তিন ধরনের একাউন্ট খুলতে পারবেন।
সবথেকে কম ব্লক মানি নেয়া হয় ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট এর ক্ষেত্রে। একাউন্ট খুলার সময় যে টাকা নেয়া হয়, সেটি ব্লক মানি হিসেবে একাউন্টে জমা থাকে। একাউন্ট বন্ধ করলে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন —
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
একাউন্টের উপর ভিত্তি করে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে তা নির্ভর করে থাকে। তবে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সাধারণত যেসব তথ্য এবং ডকুমেন্ট লাগে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হল —
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্ট এর কপি
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি
- নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
- একাউন্ট খুলতে যে পরিমাণ টাকা লাগে সেটি
- ঠিকানা যাচাই করার জন্য যেকোনো ইউটিলিটি বিলের কপি
- স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
- ইনকাম সোর্স এর প্রমাণপত্র
উপরোক্ত এই তথ্যগুলো দিয়ে ইসলামী ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলতে পারবেন। ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট, সেভিংস একাউন্ট এবং কারেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়।
ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার সময় আবেদনকারীর যদি জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে, তবে সে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েও ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবে।
ইসলামী ব্যাংকে কত ধরনের একাউন্ট আছে
ইসলামী ব্যাংকে মোট ০৩ ধরনের একাউন্ট রয়েছে। সেভিংস একাউন্ট, কারেন্ট একাউন্ট এবং স্টুডেন্ট একাউন্ট। ইসলামী ব্যাংকে আপনি মোট এই তিন ধরনের একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংকে এই তিন ধরনের একাউন্ট এর কাজ ভিন্ন হয়ে থাকে। স্টুডেন্ট একাউন্ট শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য। যারা সেভিংস করবে, তাদের জন্য রয়েছে সেভিংস একাউন্ট এবং আরেকটি হচ্ছে কারেন্ট একাউন্ট।
নিচে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে, সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে গিয়ে সকল তথ্য জমা দেয়া এবং একাউন্ট খোলার ফরম পূরণ করে একাউন্ট তৈরি করা। অপরটি হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংকের Cellfin অ্যাপ ইনস্টল করে সেটিতে একাউন্ট করে ব্যাংক একাউন্ট খোলা।
আপনি এই দুইটি পদ্ধতির যেকোনো একটি ব্যবহার করে আপনার নিজের জন্য বা অন্য কারও জন্য একটি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন। নিচে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, জেনে নেয়া যাক।
ব্রাঞ্চে গিয়ে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্রাঞ্চে গিয়ে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমেই আপনার এলাকার কাছে যে ব্রাঞ্চ আছে, সেখানে যাবেন। এরপর, তাদেরকে জানাতে হবে আপনি কোন ধরনের একাউন্ট খুলতে চান। তাহলে তারা সেই একাউন্ট খোলার জন্য একটি ফরম দিবে।
এরপর, উক্ত ফরম আপনি পূরণ করবেন সকল তথ্য দিয়ে বা তারাই আপনার কাছে তথ্য নিয়ে উক্ত ফরমটি পূরণ করবেন। অতঃপর, আপনার মোবাইল নাম্বার, বিভিন্ন ডকুমেন্ট এবং ব্লক মানি নিবেন। তারপর, আপনি ডেবিট কার্ড নিতে চান নাকি চেক সেটিও তারা জেনে নিবেন।
অতঃপর, আপনার কাজ শেষ। এসএমএস এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে আপনার একাউন্টের নাম্বার সহ সকল তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে।
অতঃপর, তাদের দেয়া সময় অনুযায়ী ব্যাংকে গিয়ে চেক বই বা ডেবিট কার্ড নিয়ে আসতে পারবেন। এভাবে করে অনেক সহজেই ব্রাঞ্চে গিয়ে একটি ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে পারবেন।
সেলফিন অ্যাপ দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম
সেলফিন অ্যাপ দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে চাইলে প্রথমেই আপনার মোবাইল থেকে গুগল প্লে ষ্টোর বা অ্যাপ ষ্টোর ওপেন করে নিন। এরপর, Cellfin লিখে সার্চ করুন। প্রথমে আসা অ্যাপটি ইনস্টল করুন। এরপর, অ্যাপটি ওপেন করুন এবং নিচে উল্লিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
সেলফিন অ্যাপটি ওপেন করার পর আপনার মোবাইল নাম্বার এবং একটি পিন কোড দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে একাউন্ট ভেরিফাই করে সেলফিন একাউন্ট তৈরি করে নিবেন। সেলফিন একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে অ্যাপের ভিতর প্রবেশ করবেন।
এরপর, Open A/C অপশনে ক্লিক করবেন এবং একটি ফরম দেখতে পারবেন। এখানে, আপনার নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বিবাহিত অবস্থা, মাসিক ইনকাম কত টাকা, ইনকামের সোর্স কী এবং পেশা কী তা সিলেক্ট করতে হবে এবং Next বাটনে ক্লিক করতে হবে।
অতঃপর, আপনার ঠিকানা, বিভাগ, থানা, পোস্ট কোড লিখবেন এবং আবারও পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য Submit বাটনে ক্লিক করবেন। এরপর, আপনার দেয়া সকল তথ্য দেখাবে। যাচাই করে নিবেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা। ঠিক থাকলে Confirm বাটনে ক্লিক করবেন।
এরপর, আপনি কোন ধরনের একাউন্ট খুলতে চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে। এজন্য, Next বাটনে ক্লিক করতে হবে। অতঃপর, নমিনি আপনার কী হন তা সিলেক্ট করতে হবে এবং নমিনির নাম, ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সাবমিট করতে হবে।
তাহলে একটি কনফার্মেশন ম্যাসেজ দেখতে পারবেন। এর মানে আপনার ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টটি খোলা সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে আপনি এই একাউন্টটি দিয়ে যেকোনো ধরণের লেনদেন করতে পারবেন।।
উপরোক্ত এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের ব্রাঞ্চে না গিয়েও আপনি ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো একাউন্ট খুলতে পারবেন ঘরে বসেই। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সবথেকে বড় এবং অধিক মূলধন এর একটি ব্যাংক।
সেভিংস করতে কিংবা কারেন্ট একাউন্ট খুলতে ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি একাউন্ট করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি চাইলে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে পারেন উপরোক্ত দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করেই।
শেষ কথা
আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট করতে কত টাকা লাগে, ইসলামী ব্যাংকে কত ধরনের একাউন্ট আছে এবং ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।